Wednesday, May 8, 2024
spot_img
Homeধর্মহারাম উপার্জনে দান–সদকা করলে কি সওয়াব হবে?

হারাম উপার্জনে দান–সদকা করলে কি সওয়াব হবে?

ইসলামে হালাল রোজগারের গুরুত্ব অপরিসীম। পবিত্র কোরআনে বিভিন্ন স্থানে আল্লাহ তাআলা ইসলাম নির্দেশিত বৈধ পথে আয় করার নির্দেশ দিয়েছেন। এরশাদ হয়েছে, ‘হে মানবজাতি, তোমরা পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তু আহার করো, আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিঃসন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা বাকারা: ১৬৮)।

পাশাপাশি হারাম রোজগারের পরিণাম সম্পর্কেও সতর্ক করা হয়েছে। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘এমন শরীর কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যা হারাম দ্বারা বর্ধিত। জাহান্নামই তার উপযুক্ত স্থান।’ (মুসনাদে আহমাদ: ১৪৪৪১)

হারাম উপার্জন বলতে বোঝায়, ইসলামে সেসব উপায়ে উপার্জন করা নিষেধ, তা অবলম্বন করে উপার্জন করা। যেমন: সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, সম্পদ আত্মসাৎ, চুরি, ডাকাতি, প্রতারণা ইত্যাদি।

সমাজে এমন হারাম উপার্জনকারী অনেক। তাদের অনেকে আবার নিজেদের ইবাদতগুজার বান্দা হিসেবে জাহির করে। ইবাদত করে মানুষের সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করে। দান–সদকা করে বেশি বেশি। আল্লাহর কাছে দোয়াও করে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তাদের এসব আমল কি আল্লাহর কাছে কবুল হয়?

জবাব হলো, হারাম উপার্জনকারীর কোনো ইবাদতই আল্লাহর কাছে কবুল হয় না। কারণ হারাম আয় ইসলামের দৃষ্টিতে অপবিত্র বস্তু। আর ইবাদত, দোয়া, দান–সদকা পবিত্র জিনিস, যা কেবল পবিত্র বস্তুর মাধ্যমেই সম্পন্ন করা আবশ্যক।

হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘এমন কখনো হবে না যে, কোনো বান্দা হারাম পন্থায় সম্পদ উপার্জন করবে, এরপর তা থেকে আল্লাহর পথে ব্যয় করবে এবং তাতে বরকত দান করা হবে; সে তা থেকে সদকা করবে এবং তা কবুল করা হবে। বরং ওই ব্যক্তি সেই সম্পদ মৃত্যুর পর রেখে গেলেও তা তাকে আরও বেশি করে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা গুনাহ দিয়ে অন্য গুনাহ নির্মূল করেন না। তবে নেক আমল দিয়ে গুনাহ নির্মূল করেন। নিশ্চয়ই অপবিত্র বস্তু অপর অপবিত্র বস্তুর অপবিত্রতা দূর করতে পারে না।’ (মুসনাদে আহমদ: ৩৬৭২; মুসনাদে বাজ্জার: ২০২৬)

অন্য এক হাদিসে এসেছে, সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)–কে একবার জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘যে ব্যক্তি এখন নেক আমল করছে; তবে আগে জুলুম–অত্যাচার করেছে এবং হারাম গ্রহণ করেছে। এখন সে নেক দিলে তওবা করে আগের সেই সম্পদ দিয়ে হজ করলে, দাসমুক্ত করলে এবং আল্লাহর রাস্তায় দান–সদকা করলে (তার ব্যাপারে কী বলেন?)।’ জবাবে তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই অপবিত্র বস্তু আরেকটি অপবিত্র বস্তু দূর করতে পারে না।’ (মুসনাদে বাজ্জার: ৯৩২)

বিশেষ করে হারাম উপার্জন থেকে দান করলে তার কোনো সওয়াব হবে না। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি হারাম সম্পদ উপার্জন করবে, এরপর তা সদকা করবে—সেই সদকায় তার কোনো সওয়াব হবে না; বরং অবৈধ উপার্জনের পাপের বোঝা তার ঘাড়ে চেপেই থাকবে।’ (সহিহ্ ইবনে হিব্বান: ৩২১৬; মুসতাদরাকে হাকিম: ১৪৪০)

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো পাপের পথে সম্পদ উপার্জন করল; এরপর তা আত্মীয়তা রক্ষায় খরচ করল বা সদকা করল অথবা তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করল; তাহলে (কেয়ামতের মাঠে) এসব কিছুই একত্রিত করা হবে; এরপর তা জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে।’ (আবু দাউদ: ১৩১)

এমনকি হারাম উপার্জনকারীর দোয়াও আল্লাহ তাআলা কবুল করেন না। হাদিসে এসেছে, ‘দীর্ঘ ভ্রমণের এলোমেলো চুল ও ধূলিমলিন চেহারার ব্যক্তি দুই হাত আকাশের দিকে তুলে বলছে—হে আমার রব, হে আমার রব; অথচ তার আহার হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক–পরিচ্ছদ হারাম। তার হারাম খাবার দিয়ে পুরো দেহ গড়ে উঠেছে। তাহলে তার এত দোয়া কীভাবে কবুল হবে?’ (মুসলিম: ১০১৫)

RELATED ARTICLES

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments