Monday, May 20, 2024
spot_img
Homeমতামতরহমতের দশকে আল্লাহপাকের সান্নিধ্য

রহমতের দশকে আল্লাহপাকের সান্নিধ্য

আজ পবিত্র মাহে রমজানের দ্বিতীয় রোজা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অপার কৃপায় মুসলিম উম্মাহ অত্যন্ত ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পবিত্র মাহে রমজানের রহমতের দশকের রোজা অতিবাহিত করছেন, আলহামদুলিল্লাহ।

বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ রোজা পালনে যেন ঐশী শান্তি উপভোগ করছেন। এ পবিত্র মাসে আল্লাহপ্রেমিকদের আধ্যাত্মিক বাগান ফুলে ফলে সুশোভিত হয়ে ওঠে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অশেষ কৃপায় সুন্দরভাবে দ্বিতীয় রোজাটি রাখার সৌভাগ্য পাচ্ছি, আলহামদুলিল্লাহ। এ জন্য আল্লাহপাকের দরবারে আমাদের অনেক বেশি কৃতজ্ঞ হয়ে দোয়ায় রত হওয়া উচিত।

হাদিস পাঠে জানা জায়, ‘রোজা ধৈর্যের অর্ধেক আর ধৈর্য ইমানের অর্ধেক। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রমজানের রোজা স্রষ্টার সাথে বান্দার সাক্ষাৎ লাভের মাধ্যম হিসেবে সর্বশ্রেষ্ঠ স্তম্ভ। আর এজন্যই হজরত রাসুলে করিম (সা.) হাদিসে কুদসির মাধ্যমে এরশাদ করেছেন ‘সম্মান ও মর্যাদার প্রভু আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের অন্য সব কাজ তার নিজের জন্য, কিন্তু রোজা একান্তই আমার জন্য এবং আমি এর জন্য তাকে পুরস্কৃত করব’। রোজা ঢাল স্বরূপ। তার নামে বলছি, যার হাতে মুহাম্মদের জীবন, রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মেশকের গন্ধের চেয়েও পবিত্র। একজন রোজাদার দু’টি আনন্দ লাভ করে। সে আনন্দিত হয় যখন সে ইফতার করে এবং রোজার কল্যাণে সে আনন্দিত হয় যখন সে তার প্রভূর সাথে মিলিত হয়’ (বুখারি)।

পবিত্র কুরআন শরিফ থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহতায়ালা ধৈর্যশীলদেরকে বেহিসাব সওয়াব দান করবেন। রোজা পালন করার ফলে একজন রোজাদার ধৈর্যের চূড়ান্ত নমুনা পেশ করেন। হাদিসে কুদসী হতে আরো জানা যায় যে, হজরত রাসুলে পাক (সা.) বলেছেন, আল্লাহ বলেন, রোজাদার তার ভোগ-লিপ্সা এবং পানাহার শুধু মাত্র আমার জন্যই বর্জন করে, সুতরাং রোজা আমার উদ্দেশ্যেই আর আমিই এর প্রতিদান (মুসলিম)। একটু চিন্তা করে দেখুন, যার প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ দিবেন, তাহলে এর গুরুত্ব কতই না ব্যাপক।

হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, হজরত রাসুলে করিম (সা.) বলেছেন, ‘শয়তান মানুষের ধমনীতে চলাচল করে, তোমরা যদি শয়তান হতে আত্মরক্ষা করতে চাও, তবে রোজার মাধ্যমে তোমাদের ধমনীকে সংকীর্ণ করে দাও। বর্ণনাকারী আরো বলেন, একবার হুজুর পাক (সা.) আমাকে বললেন, হে আয়েশা! সদাসর্বদা জান্নাতের দরজার কড়া নাড়তে থাক। জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), তা কীভাবে? তিনি (সা.) উত্তর দিলেন, রোজার মাধ্যমে’ (এহ্ ইয়াউ উলুমিদ্দীন)।

প্রত্যেক রোজাদারকে গভীরভাবে মনে রাখতে হবে যে, রোজা আদায়ের অর্থ কতগুলো বিষয় থেকে বেঁচে থাকা ও কতগুলো বিষয়কে বর্জন করা। এর মাঝে বাহ্যিকতার কোন আমল নেই। অন্য যেকোনো ইবাদত মানব দৃষ্টে ধরা পড়ে, কিন্তু রোজা এমন এক ইবাদত, যা শুধু আল্লাহতায়ালাই দেখতে পান, যার মূল শিকড় রোজাদার ব্যক্তির হৃদয়ে লুকায়িত তাকওয়ার সাথে সংযুক্ত।

মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘মানুষের হৃদয়ে যদি শয়তানের আনাগোনা না থাকতো, তবে মানুষ ঊর্ধ্বজগত দেখার দৃষ্টিসম্পন্ন হয়ে যেত। শয়তানের আনাগোনা বন্ধে রোজা হচ্ছে ইবাদত সমূহের ঢাল স্বরূপ।’ হজরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুল করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে একটি রোজা রাখে, তার এ একটি দিনের বিনিময়ে আল্লাহতায়ালা তাকে জাহান্নাম থেকে সত্তর বছরের দূরত্বে সরিয়ে রাখবেন’ (বোখারি ও মুসলিম)।

একজন ব্যক্তির কেবল অভুক্ত এবং পিপাসার্ত থাকাই রোজার মূল উদ্দেশ্য নয়। কেননা হুজুর পাক (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন কোন দিন রোজা রাখে, সে যেন অশ্লীল কথা না বলে এবং গোলমাল ও ঝগড়া-ঝাটি না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা কেউ তার সাথে ঝগড়া ঝাটি করে, তবে তার বলা উচিত, আমি রোজাদার’ (বুখারি)।

হুজুর (সা.) আরো বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রোজা রাখার পরও মিথ্যা বলা ও খারাপ কাজ করা হতে বিরত না থাকে, তার পানাহার ত্যাগ করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই’ (বুখারি)।

তাই আসুন, আমরা সবাই এই রমজানে রোজার সাধনা দ্বারা নিজকে কবুলিয়তে দোয়ার মোকামে উপনীত করতে আপ্রাণ চেষ্টা-প্রচেষ্টায় রত হই।

RELATED ARTICLES

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments