আল রোকন,রিপোর্টার কুমিল্লা,
চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ভেঙে পড়েছে দাউদকান্দির চিকিৎসা কার্যক্রম। এতে উপজেলার প্রায় ছয় লাখ মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, দোনারচর ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ও শহিদনগর ট্রমা সেন্টারে বর্তমান জনবল কাঠামো অনুযায়ী এর সংখ্যা ২২৩ জন হলেও তিনটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন ১৩৫ জন। ১০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ রয়েছে খালি। আর ১২ জন চিকিৎসক প্রেষণে অন্যত্র কর্মরত আছেন। একদিকে লোকবল সংকট আবার ১২জন চিকিৎসক প্রেষণে অন্যত্র থাকায় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকার মানুষ। চিকিৎসক সংকটের মধ্যেও এভাবে দীর্ঘদিন ধরে প্রেষণে রাখার প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি এলাকাবাসীর।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আওতাধীন দোনারচর ২০ শয্যা এবং শহিদনগর ট্রমা সেন্টারসহ বিশেষজ্ঞসহ চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৩৩টি। এর মধ্যে শূন্য ১২ টি পদ। বাকি ২১ জনের মধ্যে ১২ জন চিকিৎসক কাগজে কলমে কর্মরত। তারা প্রেষণে রাজধানী ঢাকা কিংবা তাদের সুবিধাজনক স্থানে রয়েছেন। শুধু বেতন ভাতার সময় তারা দাউদকান্দিতে আসেন। দীর্ঘদিন যাবত চলে আসছে এ অবস্থা। অথচ প্রতিদিন গড়ে কর্মরত থাকেন মাত্র চার থেকে পাঁচ জন । ফলে উপজেলার সাধারণ মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, দোনারচর ২০শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে বিশেষজ্ঞসহ ৬জন চিকিৎসকসহ ২৪ পদের মধ্যে ১৭টি পদ খালি রয়েছে। শহিদনগর ট্রমা সেন্টারে অর্থপেডিক ও এ্যানেসথেসিয়া পদসহ ২৪টি পদের মধ্যে ১২টি পদে কোন লোকবল নেই। আর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ ১৭৫জনের মধ্যে ৫৯টি পদ খালি। এর মধ্যে ২৪জন চিকিৎসকের মধ্যে আছেন ১৬ জন। তার মধ্যে ৯ জন চিকিৎসক দীর্ঘদিন যাবৎ প্রেষণে অন্যত্র।
তারা হলেন, দোনারচর ২০ শয্যা হাসপাতালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট(গাইনী) ডাঃ আফরোজা আক্তার শিল্পী ২০২১সালের ২৬এপ্রিল থেকে প্রেষণে ডিএনসিসি আইসোলেশন সেন্টার মহাখালীতে। আর জুনিয়র কনসালট্যান্ট (এ্যানেসথেসিয়া) ডাঃ তাসনুভা তানজিল গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারী থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে , আবাসিক মেডিকেল অফিসার(আরএমও) ডাঃ ফরিদা ইয়াসমিন ৪ ফেব্রুয়ারী থেকে আইএইচসি মহাখালীতে , দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালট্যান্ট( চর্ম ও যৌন) ডাঃ তাসলিমা সুলতানা গত বছরের ১৭ আগষ্ট থেকে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে , মেডিকেল অফিসার ডাঃ আংশুমান পাল গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর থেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে , ডাঃ ইমাম মেহেদী হাসান ৫ মে থেকে মালীগাঁও ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে , ডাঃ মোঃ রিপন আহম্মেদ ২০২০ সালের ২৯ জুলাই থেকে ঢাকা বিমান বন্দর স্বাস্থ্য অফিসে, সহকারী সার্জন ডাঃ লোপা ঘোষ ৩ ফেব্রুয়ারী থেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে , সহকারী সার্জন ডাঃ বিপ্লব চন্দ্র বন্দ গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর থেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে , সহকারী সার্জন ডাঃ আয়েশা আফরোজ গত বছরের ১১ডিসেম্বর থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে , সহাকরী সার্জন ডাঃ মোসাঃ ফারজানা মালেক ববি গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর থেকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও সহকারী সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ সায়েম ২০২০ সালের ২৫ মার্চ থেকে চাইল্ড হেল্থ ট্রেনিং এন্ড রিসার্স ইন্সটিটিউট মীরপুরে প্রেষণে কর্মরত রয়েছেন।
দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. রিয়াদ বলেন, ৫০ শয্যার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন গড়ে রোগী ভর্তি থাকে ৬০ থেকে ৭০ জন। আবার বহির্বিভাগেও প্রতিদিন গড়ে ৭০০ থেকে ১০০০ রোগী উপস্থিত থাকে। ফলে চিকিৎসক সংকট থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা সাধারণ রোগীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতিষ্টানটি ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের পাশে এবং ভৌগোলিকভাবে যাতায়াত ব্যবস্থা সহজের কারনে আশপাশের কয়েকটি উপজেলার মানুষ চিকিৎসার জন্য এখানে আসে। সেইসাথে সড়ক দুর্ঘটনার রোগীসহ চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে আমরাও সমস্যায় আছি। লোকবলের কারনে শহিদনগর ট্রমা সেন্টার এবং দোনারচর ২০ হাসপাতালটিতে পূর্ণাঙ্গ সেবা কার্যক্রম চালাতে পারছি না। প্রেষণ বাতিলের জন্য একাধিকবার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। তা ছাড়া শূন্যপদ পূরণের জন্যও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।

