অনলাইন ডেস্ক: ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর বাংলাদেশের অনুরোধ ভারত মেনে নেবে না বলে মনে করেন তার ছেলে, আওয়ামী লীগ নেতা সজীব ওয়াজেদ জয়। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া থেকে বুধবার ভারতের বার্তা সংস্থা এএনআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “ভারত সবসময়ই ভালো বন্ধু, আর এই সংকটের সময় ভারত মূলত আমার মায়ের জীবন বাঁচিয়েছে। তিনি যদি বাংলাদেশ না ছাড়তেন, তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের। তাই আমার মায়ের জীবন রক্ষার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।”
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ ও আন্দোলনের পর দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। সেসময় হত্যার আদেশ, উসকানি এবং সহিংসতা বাস্তবায়নের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার বিচার শুরু হয়। জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্দোলনের সময় প্রায় ১,৪০০ জনের মৃত্যু ঘটেছে। গত ১৭ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা ও তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ওই রায়ে মন্তব্য করেন, শেখ হাসিনাকে প্রত্যার্পণে ভারতকে পুনরায় চিঠি পাঠাবে অন্তর্বর্তী সরকার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়, তারা যেন অবিলম্বে দণ্ডপ্রাপ্ত দু’জনকে বাংলাদেশে হস্তান্তর করে। বিবৃতিতে বলা হয়, “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল অপরাধী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং দণ্ডপ্রাপ্ত। মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত এই ব্যক্তিদের আশ্রয় দেওয়া অবন্ধুসুলভ আচরণ এবং ন্যায়বিচারের প্রতি অবজ্ঞা।”
ভারত সরকার জানান, “বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনালে রায়ের বিষয় জেনে আমরা নিকট প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের জনগণের সর্বোচ্চ স্বার্থে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তি এবং স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে আমরা সব অংশীদারের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে সম্পৃক্ত থাকব।”
সজীব ওয়াজেদ জয় আরও বলেন, “আমি মনে করি নয়াদিল্লি খুব ভালোভাবে জানে এই প্রত্যর্পণ অনুরোধ কীভাবে সামলাতে হয়। আমি বিশ্বাস করি না ভারত সরকার এ ধরনের বেআইনি অনুরোধে সাড়া দেবে। এ নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই, কারণ আমি ভারতের গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনের ওপর আস্থা রাখি।”
জয় তার মায়ের ২০২৪ সালের বাংলাদেশ ত্যাগের প্রেক্ষাপটও ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, “আমার মায়ের জীবন রক্ষা করতে ভারত সাহায্য করেছে। আমাদের সরকার বিক্ষোভ সামাল দিতে চেষ্টা করেছিল, তবে শুরুতে কিছু ভুল ব্যবস্থাপনা হয়েছিল। পরবর্তীতে সহিংসতার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও ছিল। অনির্বাচিত সরকার দেড় বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার কারণে সবকিছু অগণতান্ত্রিকভাবে হয়েছে।”
সজীব ওয়াজেদ জয় দাবি করেন, বিক্ষোভ চলাকালে জামাত-নামধারী উগ্র সংগঠনগুলো, এমনকি পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা, সহিংসতা উৎসাহিত করেছিল। তিনি বলেন, “অবশ্যই অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছিল, এবং এর উৎস উপমহাদেশ ছাড়া সম্ভব নয়, যা সম্ভবত পাকিস্তানের আইএসআই।”
উল্লেখ্য, জয় বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া রায় অস্বীকার করেন এবং বলেন, তার মাকে আদালতে “আত্মপক্ষ সমর্থনের ন্যায্য সুযোগ দেওয়া হয়নি।”

