Friday, October 18, 2024
spot_img
Homeবিনোদন‘ময়ূরাক্ষী’ নিয়ে পরিচালক-নায়িকার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

‘ময়ূরাক্ষী’ নিয়ে পরিচালক-নায়িকার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

ঈদুল আজহায় দুটি সিনেপ্লেক্সে মুক্তি পায় ‘ময়ূরাক্ষী’। দুই সপ্তাহ না যেতেই প্রেক্ষাগৃহ থেকে নেমে গেছে সিনেমাটি। তবে সিনেমার পরিচালক রাশিদ পলাশ ও নায়িকা ইয়ামিন হক ববির পাল্টাপাল্টি অভিযোগে এখনো আলোচনায় ময়ূরাক্ষী। পরিচালকের বিরুদ্ধে সিনেমা নির্মাণ, প্রচার, কলাকুশলীদের পাওনাসহ নানা বিষয়ে অভিযোগ তুলেছেন ববি। এ নিয়ে দুজনের বাগ্‌বিতণ্ডাও হয়েছে। পরিচালকের গায়ে নায়িকার হাত তোলার খবরও ছড়িয়েছে।

বাজেট নিয়ে ববির অভিযোগ 
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে যে বাজেট দেওয়া হয়েছিল, তার চেয়ে দ্বিগুণ খরচ করেছে নির্মাতা। একজন নির্মাতার তো প্রথমেই জানা উচিত ছিল একটি ভালো সিনেমা বানাতে কত বাজেট প্রয়োজন। শুটিং শুরুর পর সে বাজেটস্বল্পতার কথা জানিয়েছে। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আজ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড একটি ভালো সিনেমা নির্মাণের জন্য তার কথামতোই খরচ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি নতুন। তারা আমাকে বলেছে, ‘আপু, নায়িকা হিসেবে আপনার নাম বলেছে, তাই আমার এতগুলো টাকা বিনিয়োগ করেছি।’ কিন্তু পর্দায় দেখার পর আমি সন্তুষ্ট হতে পারিনি। যে গল্পটা শুনে কাজ করেছি, সেটা আমি পর্দায় দেখতে পাইনি। প্রতারণার গল্প দেখাতে গিয়ে নিজেই প্রতারণা করেছেন নির্মাতা।

রাশিদ পলাশ যা বললেন এটা সত্যি, এই সিনেমার বাজেট বাড়ানো হয়েছিল। প্রথমে বাজেট ছিল ৩০ লাখ টাকা। পরে দেখলাম, আমরা যে সিনেমাটি বানাতে চাচ্ছি, তা এই টাকায় হবে না। প্রযোজককে জানানোর পর তারা জানাল, সমস্যা নেই, আমরা পাশে আছি, কাজটি আপনি করেন। কোথায় কোথায় টাকা খরচ হয়েছে তার সব হিসাব দেওয়া হয়েছে। এখন এসব অভিযোগ করাটা অমূলক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

পারিশ্রমিক নিয়ে অভিযোগ 
সিনেমার বাজেট বাড়লেও অনেক কলাকুশলী তাঁদের পাওনা নিয়ে আমাকে অভিযোগ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, আপু, আপনি তো সিনিয়র, পরিচালকের সঙ্গে একটু কথা বলেন। বিষয়টি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে জানানোর পর জানতে পারি, তাদের সঙ্গেও অনেক ঝামেলা। এখন শুনছি, অনেকেই নাকি এখনো পুরো টাকা পাননি।

রাশিদ পলাশ যা বললেন 
কলাকুশলীদের প্রতিদিনের টাকা প্রতিদিন দেওয়া হয়েছে। তবে, অনেকেই বেশি দাবি করছে। এমনটা হতেই পারে। সিনেমাটি প্রায় দুই থেকে তিন বছর সময় ধরে তৈরি হয়েছে। সে জায়গা থেকে বেশি দাবি করতেই পারেন। আমাদের জায়গা থেকে তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। তবে সবাইকে তো ঠিকঠাকভাবে খুশি করা যায় না। এটা অনেক বড় প্রোডাকশন না। এটা সবাইকে বুঝতে হবে। আর ববির সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছিল, সে পরিমাণ টাকাই তাঁকে দেওয়া হয়েছে। এমন নয় যে ৫ লাখ টাকার জায়গায় ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন যদি সে বেশি টাকা চায়, তাহলে কী করা যাবে?

ববিকে গুরুত্ব না দেওয়া 
গল্পটা যাকে নিয়ে, তাকে যদি পর্দায় স্টাবলিশ না করেন, তাহলে এর সার্থকতা কোথায়? এটা তো একজন নায়িকার সিনেমা। অথচ, সেই চরিত্রটিই পরিপূর্ণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়নি। শিডিউল দেওয়া থাকলেও আমার অনেক দৃশ্যের শুটিং করা হয়নি। ডাবিংয়ে যতটা দেখেছিলাম, ততটাও নেই। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে জানানো হয়েছিল, সিনেমার আইটেম গানেও আমাকে পারফর্ম করতে হবে। পরে জানতে পারি, সেটা অন্য কাউকে দিয়ে করা হয়েছে। আমি নতুনদের সঙ্গেও কাজ করেছি কিন্তু এমন বাজে অভিজ্ঞতা আমার হয়নি। রাশিদ পলাশ যা বললেন 
নায়িকার অনেক দিন শিডিউল ছিল কিন্তু তার অনেক দৃশ্যের শুটিং আমি করিনি—এটার জন্য কি শুধু আমি দায়ী? নায়িকার কলটাইম থাকত বেলা ১১টায়, আসত বিকেল ৫টায়। এরপর রেডি হয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াত ৭টার দিকে। রাত ১১টা বাজতেই বিভিন্ন কাজের কথা বলে চলে যেত। তাই, বেশ কিছু দৃশ্যের শুটিং করতে পারিনি। এ ছাড়া, সে নিজের মতো করে কস্টিউম পরে কাজ করত, মেকআপ নিত। এভাবে তো কাজ করা যায় না। মূল কথা, অভিনয়টা বাদ দিয়ে সে সব কাজ করেছে। সেটে আমি তার সঙ্গে পেরে উঠিনি। সিনেমা দেখার পর, ববিকে বললাম, তোমার দৃশ্য কম। একটা দিন সময় দাও, কিছু দৃশ্যের শুটিং করি। তাকে অনুরোধ করি বেলা ১১টায় আসতে।

সেদিনও সে আসে সন্ধ্যা ৬টার দিকে। পরে গল্প মেলানোর প্রয়োজনে তার শুটিং করা কিছু অংশ ফেলে দিতে হয়েছে। আর আইটেম গান ববির করার কথা ছিল না। এই গান প্রথমে সিনেমায় ছিলই না। মূলত সিনেমার ডিউরেশন বাড়াতে গানটির পরিকল্পনা করি। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে জানানোর পর তারা সম্মতি জানায়। ববিকে বিষয়টি জানালে সে জানায়, আগে তার পুরো পারিশ্রমিক পরিশোধ করতে হবে। অথচ, তখনো সিনেমার কাজ শেষ হয়নি। কাজ শেষ হওয়ার আগে তো পুরো পারিশ্রমিক দেওয়া হয় না। এরপর প্রযোজকের সঙ্গে কথা বলে আলিশাকে নিয়ে আমরা গানটির শুটিং করেছি।

প্রচার ও মুক্তি নিয়ে ববির অভিযোগ 
একটা সিনেমার পরিচালক খুব গুরুত্বপূর্ণ। তিনি যদি খামখেয়ালি করেন তাহলে কিছু করার থাকে না। তিনি একাই সব দায়িত্ব নিয়েছিলেন। রিলিজের আগে আমাকে জানিয়েছেন ১৫-১৬টি হলে মুক্তি পাবে। ঈদের আগের দিন জানতে পারি ২টি হল। ডিস্ট্রিবিউশন পলিসিটাই নির্মাতা বুঝতে পারেননি। সিনেমায় এত সুন্দর গান রয়েছে, অথচ মুক্তির আগে একটি মাত্র গান রিলিজ করা হয়। শেষ পর্যন্ত ট্রেলারটাও রিলিজ করেননি। একটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে, যার কোনো ট্রেলার নেই। এত বছর ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি, কিছুটা হলেও আমার অভিজ্ঞতা আছে। অথচ আমাকে কিছু জানানোর প্রয়োজন মনে করেননি। নিজের সিনেমার ব্যাপারে কোনো মানুষ এতটা কেয়ারলেস থাকতে পারে, সেটা ভাবতে পারিনি। আমার এক যুগের ক্যারিয়ারে তার মতো অসৎ পরিচালক দেখিনি।

রাশিদ পলাশ যা বললেন 
ঈদে সিনেমা মুক্তি দেওয়ার অভিজ্ঞতা আমার নেই। ঈদে সিনেমা মুক্তির সিদ্ধান্ত ছিল ববির। সে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে আমাকে জানায় ঈদে মুক্তির ব্যবস্থা করতে। ববি আমাকে বলেছে, কোনো চিন্তা কোরো না। আমি সব ব্যবস্থা করছি। সে যেখানে যেখানে যেতে বলেছে সেখানেই গিয়েছি। এখন হল কম পাওয়ায় আমার ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে। আর প্রচারের বিষয়টি তো  প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে আমি সহায়তার কথা বলেছি। কোনো দায়িত্ব নিইনি। তারা ডিজিটাল রাইট বিক্রি করতে পারেনি। তাই গানগুলো রিলিজ দেওয়া হয়নি। নিজের ইচ্ছেমতো যেকোনো গান বা টিজার রিলিজ করা যায় না। ববিও কিন্তু প্রমোশনে থাকেনি। বরং, সিনেমার প্রচারে যেসব জায়গায় সে গেছে, সেখান থেকে সে পারিশ্রমিক নিয়েছে। টাকা ছাড়া সে কোনো ধরনের প্রমোশন করেনি। নিজের সিনেমার প্রচারের জন্য চ্যানেলগুলোর কাছ থেকে যদি শিল্পীরা টাকা নেন, তাহলে বিষয়টা কী দাঁড়ায়?

হাতাহাতির ঘটনা 
ময়ূরাক্ষী নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে পরিচালক ও নায়িকার মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। ঈদের পরদিন বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে পরিচালকের গায়ে হাত তোলেন ববি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিনেমার প্রযোজক আয়েশা সিদ্দিকা। তবে ববি এ কথা স্বীকার না করলেও জানান, সেদিন রাশিদ পলাশের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়েছে, রাগারাগি হয়েছে। অন্যদিকে, এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি রাশিদ পলাশ।

RELATED ARTICLES

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments