সারোয়ার নেওয়াজ শামীম, হবিগঞ্জ:
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের একটি টিলার ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে ত্রিপুরা পল্লীর বাসিন্দারা।
স্থানীয়রা বলছেন, চা বাগান ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের বিভিন্ন জায়গা থেকে বালু তোলায় পাহাড়ি ঢল শুরু হলেই ভাঙছে টিলাটি। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে যাওয়া ঢাকা-সিলেট পুরাতন মহাসড়কের দক্ষিণ দিকের টিলায় ২৪টি ত্রিপুরা পরিবারের বাস। পাঁচ বছরে ভাঙনের শিকার হয়ে বাসস্থান হারিয়েছে চারটি পরিবার। বাকি পরিবারগুলোরও দিন কাটছে ভাঙন আতঙ্কে।
পাহাড়ি ঢলে ভেঙে গেছে পল্লীতে যাওয়ার একমাত্র পাকা ব্রিজের সংযোগ সড়ক। ত্রিপুরা পল্লির বাসিন্দারা জানান, কয়েক বছর ধরে পাহাড়ি ঢলের কারণে ভাঙন দেখা দেয় ত্রিপুরা পল্লীর টিলায়। এ কারণে সেখান থেকে ২০১৮ সালে দুটি ও ২০১৯ সালে একটি পরিবার ও চলতি বছরের এপ্রিলে আরো একটি পরিবার টিলা ছেড়ে চলে যায়। এদের মধ্যে দুটি পরিবারকে অন্য একটি টিলায় স্থানান্তর করে বন বিভাগ।
সরেজমিনে দেখা যায়, এ বছরের পাহাড়ি ঢলে পাকা ব্রিজের সংযোগ সড়ক ভেঙে গেছে। প্রায় এক দেড়শ লোক যাতায়াতের সংযোগ সড়কটি মেরামতের উদ্যোগ নেই। পাহাড়ের টিলা ভাঙন থামছেই না। এতে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে পল্লীর বাসিন্দাদের মাঝে। যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাটিও ভেঙে গেছে।
এ কারণে অনেক কষ্টে পল্লীতে যাতায়াত করতে হচ্ছে তাদের। ভাঙনের কারণে আরো দুটি পরিবার সেখান থেকে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, নির্বাচনের সময় জনপ্রতিনিধিরা গাইডওয়াল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। কিন্তু পরে আর কেউ তাদের খবর নেন না।
স্থানীয়দের আশঙ্কা, যে হারে টিলা ভাঙছে, দুই-তিন বছরের মধ্যে এটি পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাবে।
ত্রিপুরা পল্লীর হেডম্যান চিত্ত রঞ্জন দেববর্মা বলেন, ‘টিপরা পল্লিতে আগে অনেক মানুষের বাস ছিল। এখানে আমাদের খবর কেউ নেয় না। বিভিন্ন সমস্যার সময়ও আমাদের দুঃখ-কষ্ট কেউ শোনে না। শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান ও কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন সমস্যায় এখানের বাসিন্দারা অন্যত্র চলে গেছেন।’
তিনি বলেন, ‘সবশেষ এখানে আমরা ২৪টি পরিবার ছিলাম। কিন্তু টিলা ভেঙে পড়ায় ইতোমধ্যে এখান থেকে চারটি পরিবার চলে গেছে। নতুন করে আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে। আরো দুটি পরিবার এখান থেকে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘টিলায় ভাঙন দেখা দেওয়ার এই জায়গাটিও আমরা হারাতে বসেছি। জানি না, আমাদের শেষ ঠিকানা কোথায় হবে।’
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের রেঞ্জ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি মাত্র যোগদান করেছি। আমি এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।
৪নং ইউ পি চেয়ারম্যান ওয়াহেদ আলী মাষ্টার বলেন, আমি যতটুকু সাধ্য চেষ্টা করছি, আশা করি শীঘ্রই পল্লী সমস্যা সমাধানে কতৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ নিবেন।

