Sunday, November 24, 2024
spot_img
Homeসারাদেশগুলিবিদ্ধ কিশোরকে রিকশায় তুলতে গিয়ে চালকের চিৎকার, এ তো আমার ছেলে

গুলিবিদ্ধ কিশোরকে রিকশায় তুলতে গিয়ে চালকের চিৎকার, এ তো আমার ছেলে

জীবিকার তাগিদে প্রতিদিনের মতো গত ২১ জুলাই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে বের হন চালক ওবায়দুল ইসলাম (৩৯)। ঢাকার যাত্রাবাড়ীর ধনিয়া এলাকার অনাবিল হাসপাতালের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ এক কিশোরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাকে অনুরোধ জানান পথচারী দুই যুবক। তিনি রাজি হলে, গুলিবিদ্ধ কিশোরকে অটোরিকশায় তোলার সময় মুখ দেখে চমকে ওঠেন ওবায়দুল। গুলিবিদ্ধ কিশোরকে জড়িয়ে ধরে বুকফাটা চিৎকার করে ওবায়দুল বলেন, ‘এ তো আমার ছেলে’। এ সময় তার আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতাল এলাকা। ভিড় করেন শত শত মানুষ।

একমাত্র সন্তান আমিনুল ইসলাম আমিনকে (১৬) নিয়ে দ্রুত ছুটে যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানালেন হাসপাতালে নেওয়ার আগেই আমিনের জীবনপ্রদীপ নিভে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওবায়দুল ইসলাম ও তার স্ত্রী সেলিনা বেগম একমাত্র ছেলে আমিনকে নিয়ে ঢাকার কদমতলী থানাধীন দক্ষিণ দনিয়ায় নতুন এ কে স্কুল রোডের একটি টিনশেডের বাসায় ভাড়া থাকতেন। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর ২০২০ সালে করোনাকালীন সময়ে পড়াশোনা থেমে যায় আমিনের। পরে পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে ঢাকার ‘ওয়ান টাচ’ নামের একটা বৈদ্যুতিক সুইচ তৈরির কারখানায় গত ৪ বছর ধরে কাজ করত।

এলাকাবাসীর সহায়তায় সেদিন রাতেই অ্যাম্বুলেন্সে করে আমিনের মরদেহ নিয়ে আসেন গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের ভরিপাশা গ্রামে। ২২ জুলাই সকাল ৯টায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় আমিনের মরদেহ।

সরেজমিনে বাউফলের কেশবপুরে গেলে নিহত আমিনের বাবা ওবায়দুল ইসলাম কান্নাজড়িত কণ্ঠে  জানান, গত ২১ জুলাই বিকেল ৫টার দিকে আমিন ঘুম থেকে উঠে দোকান থেকে চাল এনে দেয়। পরে বাসার সামনে বের হলে আন্দোলনের মধ্যে পড়ে যায়। বাসার সামনে থাকা একটি দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে আন্দোলন দেখছিল আমিন। হঠাৎ একটি গুলি এসে আমিনের বুকের বাম দিকে হৃৎপিণ্ড বরাবর লাগে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আমিন বাসার দিকে ছুটে আসতে চাইলে কিছুটা দৌড়ে এসে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে। তখন স্থানীয় দুই যুবক তাকে অনাবিল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার সময় তার অটোরিকশাই ঠিক করেন।

ওবায়দুল ইসলাম বলেন, আমিনকে রিকশায় তোলার সময় আমি চিনে ফেলি, এটা যে আমারই কলিজার টুকরা।

দাদি লাভলী বেগম আমিনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমার এই নাতি ওর দাদার নাহান নিচের দিকে তাকাইয়া হাঁটত। আমার অনেক শখের নাতি, এই নাতি আমি কোম্মে পামু! আমি আমিনের ছবি দেখতে পারি না, দেখলে আমার মাথা ঠিক থাকে না। আমার ছেলের আশাভরসা সব শেষ। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি আমার নাতির হত্যার বিচার চাই।’

এ সময় সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণেরও দাবি জানান তিনি।

আমিনের গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বশির গাজী বলেন, ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন থেকে নিহতদের তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। আমরা বাউফল উপজেলার সকল নিহতের তথ্য সেখানে পাঠিয়েছি। নিহতের পরিবার যাতে সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা পায় সেজন্য স্থানীয় প্রশাসন সর্বোচ্চ সহায়তা করবে।

RELATED ARTICLES

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments