গৌতম কুমার মহন্ত, নওগাঁ থেকেঃ
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন,আমরা রাজনীতি করি এদেশ ও দেশের মানুষের জন্য। দেশের মানুষের জীবনযাত্রা একটু যদি ভালো হতে পারে সেই বিষয়ে আমাদের পরিকল্পনা আছে।দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও দেশের সম্পদ ঠিক রেখে মানুষের পক্ষে কিভাবে কাজ করা যায় সেটাই বিএনপি’র লক্ষ্য।১১ আগস্ট সোমবার নওগাঁ জেলা বিএনপির সন্মেলন তিনি এসব কথা বলেন।দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এ সম্মেলন স্থায়ী হয়।এ সম্মেলনে কাউন্সিলরদের গোপন ভোটের মাধ্যমে নওগাঁ জেলা বিএনপি’র সভাপতি পদে আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নু,সাধারণ সম্পাদক পদে মামুনুর রহমান রিপন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক নূর-ই আলম মিঠু,শফিউল আজম ভিপি রানা এবং খায়রুল আলম গোল্ডেন নির্বাচিত হয়েছেন।নওগাঁ শহরের কনভেনশন সেন্টারে জেলা বিএনপি’র দ্বি-বার্ষিক এ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আরো বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন হবে।এ কঠিন পথ সফল করতে হলে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের দুটি কাজ করতে হবে।জনগণের আস্থা ও ভরসা অর্জন করতে হবে।শহীদ জিয়ার সৈনিকদের এমন কিছু করা যাবে না যাতে জনগণের আস্থা নষ্ট হয়ে যায়।তাই এক্ষেত্রে একজন আরেক জনের প্রতি নজর রাখবেন।প্রধান অতিথি তারেক রহমান আরো বলেন,এখন অনেক ঘুঘু ঘুরঘুর করছে।এসব ঘুঘুদের হতে সাবধান থাকতে হবে।এ ঘুঘুরা শুধু নিজেদের স্বার্থ বোঝে।তারা সুযোগ বুঝে আসবে এবং আপনাদের ব্যবহার করবে।আপনাদের সুনাম নষ্ট করবে এবং দলের ক্ষতি করে সুর সুর করে চলেও যাবে।এই ঘুঘুরা যেন আসতে না পারে ও যেন সুযোগ না পায়।উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরো বলেন,আপনারা বছরের পর বছর আদালতে ঘুরেছেন। ৬০ লাখ নেতাকর্মীদের নামে গায়েবি মামলা দেওয়া হয়েছে।অনেক নির্যাতন অত্যাচার সহ্য করেছেন। তবুও বিএনপি থেকে পিছপা হননি। তাই ভালো কাজ করুন, শহীদ জিয়ার আদর্শ তুলে ধরুন এবং জনগণের আস্থা অর্জন করুন।আল্লাহ চাইলে সামনে আমরা দেশ পরিচালনা করব।তারেক রহমান উপস্থিত কাউন্সিলরদের উদ্দেশ্যে বলেন,বিএনপি একটি বড় দল। একটি পরিবারে যেমন নিয়ম নীতি থাকে, ঠিক তেমনি বিএনপিতেও নিয়ম নীতি আছে তারই অংশ হিসেবে আজকের এ সম্মেলন।আর আপনারা ভোট দিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নেতা নির্বাচন করবেন, পরবর্তী সাংগঠনিক মেয়াদ পর্যন্ত দায়িত্ব দিবেন।আপনারা ভেবেচিন্তে সেই সব মানুষ গুলোকে দায়িত্ব দিন,যারা আগামী দিনে দলকে ভালোভাবে পরিচালনা করবেন,সুসংগঠিত করবে।তিনি বলেন, আমার পরিচয় আমি একজন বিএনপির কর্মী। ঠিক আপনাদের পরিচয়ও আপনি বিএনপির কর্মী। আর সেই কারণে মানুষ একজন বিএনপি কর্মীর কাছে দেশ সম্পর্কে জানতে চায়। বিএনপির উপর আস্থা ও ভরসা আছে জন্যই তারা আপনার কাছে এসে জানতে চায়, সহযোগিতা চায়। কাজেই তাদের সেই আস্থা ও ভরসা ধরে রাখার দায়িত্ব আপনার।ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন,দেশের জনগণ প্রায় ২০ কোটি। এর অর্ধেক নারী।এখন এই অর্ধেক জনসংখ্যাকে পেছনে রেখে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারব না। একটি জাতিকে যদি সামনে এগিয়ে নিতে চাই অন্তত শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আর এক্ষেত্রে খালেদা জিয়া এ অর্ধেক নারী সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তাদের বিনামূল্যে শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করেছেন।উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার একটি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে।এ সংস্কার কমিশন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে।অথচ দুই-আড়াই বছর আগে যখন স্বৈরাচার দেশের মানুষের টুঁটি চেপে ধরেছিল,ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল, আজ যে স্বৈরাচারকে বাংলাদেশের মানুষ এদেশের মাটি থেকে বিতাড়িত করেছে, এ স্বৈরাচার যখন মানুষের অর্থ সম্পদ লুটপাট করেছে, সেই সময় বিএনপি বাংলাদেশের মানুষের সামনে ৩১ দফা ঘোষণা করেন রাষ্ট্র মেরামতের জন্য। যেখানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় সবগুলোই আছে।স্বৈরাচারের সময় দেখেছি রাষ্ট্রের সকল সেক্টরকে কীভাবে ধ্বংস করে দিতে হয়।তারেক রহমান বলেন,আমরা কাউকে হেয় করতে চাই না। আমরা সকলকে নিয়ে কাজ করতে চাই। একটি সুন্দর রাষ্ট্র গঠন করতে চাই। কিন্তু যারা গত ছয় মাস বা এক বছর ধরে সংস্কারের কথা বলছে, তাদের বহু আগে জিয়ার সৈনিকরা ৩১ দফা ঘোষণা করেন।আজকে অনেক দল বলছে এই সংস্কার নাহলে নির্বাচন করব না ওই সংস্কার না হলে নির্বাচন করব না।তারা বলতেই পারে।সকলেরই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে।তিনি আরও বলেন,বিএনপির দেশ পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা রয়েছে।অভিজ্ঞতা আছে খাদ্য উৎপাদন কীভাবে দ্বিগুণ করতে হয়, নারী সমাজকে কীভাবে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে হয়। অভিজ্ঞতা রয়েছে কীভাবে এদেশের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হয়। বিএনপির অভিজ্ঞতা রয়েছে কীভাবে রাষ্ট্র মেরামত করতে হয়। আমার ঘরই যদি না থাকে তাহলে আমি কোথায় আশ্রয় নেব। কাজেই বাংলাদেশ যদি ঠিক না থাকে এই কোটি কোটি মানুষ কোথায় যাবে।দেশের মানুষের প্রথম এবং শেষ আশ্রয়স্থল এ ৫৫ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশ।তিনি বলেন,স্বৈরাচার পালিয়ে যাওয়ার কয়েকদিন পরে আমাদের মধ্যে হয়তো অনেকেই ভাবছে একটি প্রতিপক্ষ তো আর মাঠে নেই,আগামী নির্বাচন কি আর কঠিন হবে।কিন্তু একটি অদৃশ্য শক্তি বিভিন্নভাবে কাজ করছে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র হচ্ছে।তবে যতই ষড়যন্ত্র করা হোক না কেন আগামী দিনে আমরা ইনশাআল্লাহ সফল হব। যদি বিএনপি নামক পরিবারটির সকল সদস্য ঐক্যবদ্ধ থাকে।সর্বশেষ উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন,জনগণের আস্থা অর্জন করে জিতলেই হবে না।দেশকে ভালোভাবে পরিচালনা করতে হবে। যে ৩১ দফা দেয়া হয়েছে সেটিকে যদি বাস্তবায়ন করতে হয় তাহলে অবশ্যই শহীদ জিয়া ও খালেদা জিয়ার প্রত্যেকটি সৈনিককে আপন ভাই- বোনের মতো ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।এর আগে এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম।জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক রেজাউল ইসলাম রেজুর সভাপতিতে সম্মেলনে সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু,রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত,রাজশাহী বিভাগের বিএনপি’র সহসাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম,সহসাংগঠনিক সম্পাদক এ এইচ এম ওবায়দুর রহমান চন্দন এবং বগুড়া জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক রেজাউল করিম বাদশাসহ কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় বিএনপি’র নেতারা বক্তব্য রাখেন।

