আব্দুল মালেকঃ
বাংলাদেশের দলীয় রাজনীতিতে এক সময় নেতৃত্ব নির্ধারিত হতো শিক্ষাগত যোগ্যতা, সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা ও নৈতিকতার ভিত্তিতে। সমাজে যিনি শিক্ষিত, মার্জিত এবং ত্যাগী— তিনিই জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে রাজনীতিতে স্থান পেতেন। কিন্তু বর্তমানে সেই চিত্র অনেকটাই বদলে গেছে।
এখন দেখা যাচ্ছে, রাজনীতিতে জায়গা করে নিচ্ছে নানা অপকর্মে জড়িত এক শ্রেণির মানুষ। যারা একদিকে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, অন্যদিকে চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রভাব খাটাচ্ছে। ফলে রাজনীতি তার মূল উদ্দেশ্য— জনগণের সেবা থেকে সরে গিয়ে ক্ষমতা দখল আর অবৈধ সম্পদ অর্জনের হাতিয়ারে পরিণত হচ্ছে।
যোগ্যতার সংকট
বর্তমানে দলগুলোতে মনোনয়ন প্রক্রিয়া ও পদবণ্টনে যোগ্যতার চেয়ে অর্থ-সামর্থ্য ও প্রভাবশালী চক্রের ইঙ্গিতকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এতে সৎ, শিক্ষিত ও মার্জিত নেতারা দল থেকে উপেক্ষিত হচ্ছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ কারণে তরুণ ও মেধাবী মানুষ রাজনীতিতে আসতে নিরুৎসাহিত হচ্ছে।
মাদক ও চাঁদাবাজদের প্রভাব
অপরাধ জগতে সক্রিয় অনেকেই এখন রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে পার পাচ্ছে। মাদক ব্যবসায়ী কিংবা চাঁদাবাজরা দলে পদ নিয়ে তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে নির্ভয়ে। এতে সাধারণ জনগণ ভুক্তভোগী হচ্ছে, আবার রাজনৈতিক সংস্কৃতি ।
তরুণ, শিক্ষিত ও সমাজসেবামুখী মানুষকে রাজনীতিতে আসতে উৎসাহিত করতে হবে।কলুষিত হচ্ছে।
দুর্নীতির বিস্তার
রাজনীতিতে অপরাধীদের প্রবেশের ফলে দলীয় পর্যায়ে দুর্নীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। টেন্ডারবাজি, ভূমি দখল, চাঁদা আদায় থেকে শুরু করে প্রশাসনিক নিয়োগ বাণিজ্য পর্যন্ত— সব ক্ষেত্রেই তাদের প্রভাব বিস্তার করছে।
গণতন্ত্রের জন্য হুমকি
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শিক্ষিত ও মার্জিত নেতৃত্ব হারিয়ে গেলে রাজনীতি জনগণমুখী থাকে না। অপরাধী চক্র রাজনীতি দখল করলে গণতন্ত্র দুর্বল হয়, ন্যায়বিচার ব্যাহত হয় এবং সমাজে অস্থিরতা তৈরি হয়।
সমাধানের পথ
রাজনৈতিক দলগুলোকে মনোনয়ন ও পদবণ্টনে কঠোরভাবে যোগ্যতার মানদণ্ড প্রয়োগ করতে হবে।
দুর্নীতিবাজ, মাদক ব্যবসায়ী ও চাঁদাবাজদের দলে প্রবেশ বন্ধ করতে হবে
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাজনীতিকে অপরাধমুক্ত করা জরুরি।
রাজনীতি হলো সমাজ ও দেশ পরিবর্তনের হাতিয়ার। কিন্তু যখন সেই রাজনীতিই অপরাধীদের হাতে চলে যায়, তখন জনগণ আস্থা হারায়। দলীয় রাজনীতিকে জনগণের আস্থার জায়গায় ফিরিয়ে আনতে হলে শিক্ষিত, মার্জিত ও যোগ্য নেতৃত্বের বিকল্প নেই। এখনই রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত অপরাধীদের বর্জন করে নীতি, আদর্শ ও সততার ভিত্তিতে নেতৃত্ব গড়ে তোলা।

