বিমান হামলা চালিয়ে সিরিয়ার দামেস্কে অবস্থিত ইরানের দূতাবাস গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েল। গতকাল সোমবারের এ হামলায় ইরানের তিনজন শীর্ষ কমান্ডারসহ আট সামরিক কর্মকর্তার মৃত্যু হয়েছে। এ হামলার ফলে আঞ্চলিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ তীব্রতর হবে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
দামেস্কের মেজ্জেহ জেলায় জরুরি সেবাকর্মীদের ইরানি দূতাবাসের প্রধান ভবনসংলগ্ন কূটনৈতিক কম্পাউন্ডের ভেতরে একটি বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপ বেয়ে ওপরে উঠতে দেখা যায়। ধ্বংসস্তূপের কাছেই একটি পোলে ইরানি পতাকা ঝুলতে দেখা যায়।
ঘটনাস্থলে সিরিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল মেকদাদ। মেকদাদ বলেন, ‘দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেট ভবন লক্ষ্য করে হামলা করা হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এই নৃশংস সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানাই।’
সিরিয়ায় নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, দূতাবাস প্রাঙ্গণের একটি কনস্যুলার ভবনে হামলা চালানো হয়েছে এবং ওপরের দোতলাতেই তাঁর বাসভবন ছিল।
এক বিবৃতিতে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস জানায়, হামলায় কুদস বাহিনীর এক শীর্ষ কমান্ডার মোহাম্মদ রেজা জাহেদিসহ ইরানের সাত সামরিক উপদেষ্টার মৃত্যু হয়েছে। কুদস বাহিনী ইরানের অভিজাত বিদেশি গুপ্তচর এবং আধা সামরিক বাহিনী।
ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে সিরিয়ায় ইরানের সামরিক স্থাপনা এবং এর প্রক্সিদের লক্ষ্যবস্তু করে আসছে। কিন্তু গতকাল সোমবারের হামলায় প্রথমবারের মতো ইরানের দূতাবাসের বিশাল প্রাঙ্গণে আঘাত করেছে ইসরায়েল। ইরান সমর্থিত ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর পাশাপাশি তারা সিরিয়ায় ইরানের ওপর হামলা বাড়িয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর হামাস বাহিনী ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালানোর পর থেকেই গাজায় বর্বরতা শুরু করে ইসরায়েল। হামাসের হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষের মৃত্যু হয় এবং ২৫৩ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৩২ হাজার ৮৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
সিরিয়ায় ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস ও ইরান সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে বিমান হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল। এ দুটি গোষ্ঠীই সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সমর্থক।
সাধারণত সিরিয়ায় হামলার বিষয়ে কোনো আলোচনা করে না ইসরায়েল। দূতাবাসে হামলার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা বিদেশি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে মন্তব্য করি না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চার ইসরায়েলি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েল এ হামলা চালিয়েছে।
ইরানের জাতিসংঘ মিশন এই হামলাকে ‘জাতিসংঘ সনদ, আন্তর্জাতিক আইন এবং কূটনৈতিক ও কনস্যুলার প্রাঙ্গণের মৌলিক নীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। তারা বলে, এই হামলা ‘আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য হুমকি’ এবং ইরানি মিশন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে এই হামলার নিন্দা জানানোর আহ্বান জানিয়েছে এবং বলেছে যে তেহরান ‘চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়া নেওয়ার’ অধিকার রাখে।
এই অঞ্চলে ইরানের সবচেয়ে শক্তিশালী সশস্ত্র প্রক্সি হিসেবে পরিচিত লেবাননের গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ এই হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছে।
ইরাক, জর্ডান, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মুসলিম দেশগুলো এবং রাশিয়া এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
এর আগে সিরিয়ায় নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত হোসেইন আকবরি ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেন, কূটনীতিকসহ পাঁচ থেকে সাতজন নিহত হয়েছেন এবং তেহরানের প্রতিক্রিয়া হবে ‘কঠোর’।