• আজকের পত্রিকা
  • ই-পেপার
  • আর্কাইভ
  • কনভার্টার
  • অ্যাপস
  • যমুনার ভাঙনে বিলীন জনপদ,স্থায়ী বাঁধের দাবিতে দেওয়ানগঞ্জে মানববন্ধন 

     swadhinshomoy 
    25th Sep 2025 6:28 pm  |  অনলাইন সংস্করণ Print
    মোঃ রামু মিয়া,জামালপুর, প্রতিনিধি:

    জীবনের সমস্ত সঞ্চয় নদীতে ভেসে গেছে। একের পর এক ঘরবাড়ি সরিয়েও রক্ষা নেই। একসময় যে জমিতে সোনালি ধান দুলত, আজ সেখানে যমুনার উত্তাল স্রোত। সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অজানা আতঙ্ক। এমনই ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চিকাজানী ইউনিয়নের চর ডাকাতিয়া পাড়া, হাজারিয়া পাড়া, খোলাবাড়ি ও বড়খাল এলাকার মানুষ।

    এই ভাঙনরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবিতে বুধবার সকাল ১১টায় যমুনা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করেন স্থানীয়রা। নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-শিশু, শিক্ষক, কৃষক—সবাই হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে অংশ নেন এ কর্মসূচিতে।
    স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক বছরে যমুনার ভাঙনে শত শত বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। হাজার হাজার একর ফসলি জমি নদীর গর্ভে তলিয়ে গেছে। আরও অসংখ্য জমি ও বসতি এখন ভাঙনের হুমকির মুখে।
    বিশেষ করে চরমাগুরী হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর ডাকাতিয়া হাজারি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেলোয়ার হোসেন হাই স্কুল, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও একটি ব্রিজসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।যেকোনো মুহূর্তে নদীগর্ভে চলে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছে। বিদ্যালয়গুলো ভাঙনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকায় শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন আতঙ্কের মধ্যে ক্লাস করছে।
    মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আব্দুল কাদের বলেন,
    “নদী ভাঙনে আমার তিন বিঘা জমি নদীতে গেছে। গত দুই বছরে আমাকে তিনবার বাড়ি সরাতে হয়েছে। যেখানে আমার পাকা ঘর ছিল, আজ সেখানে নদীর পানি বইছে। ছেলেমেয়েদের নিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে থাকতে হয়। বাঁচার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সরকার যদি দ্রুত স্থায়ী বাঁধ না করে, আমরা আরও সর্বস্বান্ত হয়ে যাবো।”
    চর ডাকাতিয়া হাজারি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোঃখাদিমুল ইসলাম নিজের আতঙ্কের কথা তুলে ধরে বলেন,
    “আমাদের বিদ্যালয়টি এখন নদীর একদম কিনারায়। প্রতিদিন আমরা দুশ্চিন্তায় থাকি, কখন এটি নদীতে ভেঙে পড়বে। শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি ভীষণ চিন্তিত। যে কোনো সময় শত শত শিক্ষার্থী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হারিয়ে অন্ধকারে চলে যাবে। স্থায়ী বাঁধ ছাড়া আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই।”
    স্থানীয় গৃহবধূ মোছাঃ লিমা আক্তার চোখের জল মুছতে মুছতে বলেন,
    “নদীভাঙনে আমাদের ফসলি জমি শেষ হয়ে গেছে। ঘরবাড়ি নদীতে চলে গেছে। এখন স্বামী-সন্তান নিয়ে না খেয়ে থাকতে হয়। কোথায় যাবো, কার কাছে যাবো, বুঝতে পারি না। নদীভাঙনের কষ্ট যে কত ভয়াবহ, তা না ভোগ করলে বোঝা যাবে না। আমরা সরকারের কাছে হাতজোড় করে বলি, স্থায়ী বাঁধ করুন। না হলে আমাদের বাঁচার উপায় নেই।”
    মানববন্ধনে চিকাজানী ইউনিয়নের সদস্য মোঃ আবু হানিফ, মোঃ আবু মিয়া, মোঃ বাবু প্রামানিক,মোঃ সোনামিয়া মেম্বার, মোঃ শাহীন মেম্বারসহ অনেকেই বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন, যমুনা ভাঙনের কারণে মানুষের জীবন ও জীবিকা হুমকির মুখে। শুধু ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারই নয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ সরকারি স্থাপনাও বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
    তাদের অভিযোগ, বছর বছর অস্থায়ী বালুর বস্তা ফেলে ভাঙনরোধের চেষ্টা করা হলেও তা স্থায়ী সমাধান নয়। বর্ষা এলেই আবারো ভাঙন শুরু হয়।
    ভাঙনের ফলে হাজারো পরিবার ভূমিহীন হয়ে পড়েছে। অনেকেই একাধিকবার ঘর সরিয়ে অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছে। জমি-জিরাত হারিয়ে কেউ কেউ ভিটেমাটি ছাড়াই অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। কৃষি জমি হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। বেকার হয়ে পড়েছেন দিনমজুররা।
    অন্যদিকে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হলে শিক্ষার্থীরা স্কুলছুট হয়ে পড়বে। চিকিৎসা সেবার জন্য দূরে যেতে হবে গ্রামবাসীকে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। ফলে গোটা অঞ্চলের মানুষ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে।
    মানববন্ধনে বক্তারা সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তারা বলেন, ভাঙনরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। এই এলাকায় স্থায়ী নদী শাসন করা হলে হাজার হাজার একর জমি ও শত শত বসতবাড়ি রক্ষা পাবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি ক্লিনিক, ব্রিজসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।
    স্থানীয়রা জানান, একের পর এক আবেদন ও দাবি জানিয়েও তারা কোনো কার্যকর পদক্ষেপ পাননি। ফলে হতাশা দিন দিন বাড়ছে। তারা আশা করছেন, এবার সরকার তাদের আর্তনাদ শুনবে এবং স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করবে।
    যমুনা ভাঙনের শিকার মানুষগুলো প্রতিদিন চোখের সামনে তাদের স্বপ্ন বিলীন হতে দেখছেন। ভাঙনের গর্জন শুনেই তারা ঘরবাড়ি গুটিয়ে নিরাপদ স্থানে পালাতে বাধ্য হন। কিন্তু কোথাও যেন নিরাপদ আশ্রয় নেই।
    মানববন্ধনে যোগ দেওয়া কৃষক, শিক্ষক ও গৃহবধূদের কান্না এ অঞ্চলের হাজারো মানুষের মনের কথা। তাদের একটাই দাবি—“আমাদের রক্ষা করুন, স্থায়ী বাঁধ দিন।”
    সরকারি উদ্যোগে যদি দ্রুত স্থায়ী নদী শাসনের ব্যবস্থা না করা হয়, তবে যমুনার ভাঙনে পুরো এলাকা ধ্বংস হয়ে যাবে—এমন আতঙ্ক এখন সবার মনে।
    উপরের নিউজটি মাঠ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে করা এ বিষয়ে কোন দ্বিমত থাকলে প্রমাণসহ dailyswadhinshomoy@gmail.com এ ইমেইল করে আমাদেরকে জানান অথবা আমাদের +88 01407028129 নাম্বারে হোয়াটসঅ্যাপ করুন।
    আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
    এই বিভাগের আরও খবর
     
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    September 2025
    S M T W T F S
     123456
    78910111213
    14151617181920
    21222324252627
    282930