• আজকের পত্রিকা
  • ই-পেপার
  • আর্কাইভ
  • কনভার্টার
  • অ্যাপস
  • হাতিয়ায় যৌন হয়রানির অভিযোগে বিতর্ক: বহাল শিক্ষক 

     swadhinshomoy 
    12th Oct 2025 9:39 pm  |  অনলাইন সংস্করণ Print

    হাতিয়া নোয়াখালী প্রতিনিধি:

    নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ১নং হরণী ইউনিয়নের হাতিয়া বাজারসংলগ্ন হাতিয়া জনকল্যাণ শিক্ষা ট্রাস্ট হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক আজিজুর রহমানের বিরুদ্ধে একের পর এক ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিক লিখিত অভিযোগ এবং তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও অভিযুক্ত শিক্ষক এখনও দায়িত্বে বহাল রয়েছেন। এতে অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

    ২০২২: প্রথম অভিযোগ ও অসম্পূর্ণ শাস্তি
    প্রথম অভিযোগটি আসে ২০২২ সালে, যখন ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান অভিযোগ করে যে শিক্ষক আজিজুর রহমান তাকে বারবার কুপ্রস্তাব ও শারীরিকভাবে উত্যক্ত করেন।
    অভিযোগের পর বিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে, যার নেতৃত্বে ছিলেন মোহাম্মদ আলী কলেজের অধ্যক্ষ আজমীর হোসেন, হাতিয়া ওছখালী এ.এম. উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. হাসান, এবং জাহাজমারা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সোলাইমান।

    তদন্তে অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে শিক্ষককে ৬ মাসের জন্য বহিষ্কারের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু মাত্র ৪ মাস পর স্থানীয় কয়েক রাজনৈতিক নেতার সহযোগিতায় তিনি পুনরায় বিদ্যালয়ে ফিরে আসেন। আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো—বহিষ্কারের সময়টিতে তাঁর হাজিরা খাতায় উপস্থিতি দেখানো হয় এবং তিনি সম্পূর্ণ বেতন-ভাতা ভোগ করেন।

    ২০২৩: পরীক্ষাকেন্দ্রেই হয়রানি, কর্তৃপক্ষের নীরবতা
    পরের বছর ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষাকালীন সময়ে আয়েশা আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের এক পরীক্ষার্থী অভিযোগ করেন—পরীক্ষাকেন্দ্রে আজিজুর রহমান তার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন এবং তাকে উত্যক্ত করেন।
    অভিযোগের পরও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী মহলে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

    ২০২৪: তৃতীয় অভিযোগ ও ধামাচাপার চেষ্টা
    ৭ জুলাই ২০২৪ তারিখে সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী একইভাবে যৌন হয়রানির শিকার হয়। শিক্ষার্থী প্রথমে সহকারী শিক্ষিকা ফারজানা বেগমকে ও পরে ফাতেমা ইসরাত ডলিকে বিষয়টি জানায়।

    প্রধান শিক্ষক মো. আলী মানসুর এর নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটি—যার সদস্য ছিলেন জহির রায়হান, ফাতেমা ইসরাত ডলি, মিনারা বেগম ও ফারজানা বেগম—অভিযোগকে সত্য বলে রিপোর্ট প্রদান করে।
    এরপর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তার সহপাঠী সুবর্ণা আক্তার, তাসলিমা আক্তার ও অরিনকে নিয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দেন।

    কিন্তু সহকারী শিক্ষক জহির উদ্দিন অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণের চেষ্টা করেন এবং শিক্ষার্থীদের উপর চাপ সৃষ্টি করেন বলে জানা যায়। অভিযুক্ত শিক্ষক কিছুদিন পলাতক থাকলেও ৫ আগস্ট ২০২৪ আবারও বিদ্যালয়ে যোগ দেন।

    ঘটনাগুলির পর প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ প্রধান শিক্ষক মো. আলী মানসুর এর সঙ্গে এক জরুরি বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে উপস্থিতদের বক্তব্য অনুযায়ী, প্রধান শিক্ষক সব অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেন তবে প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেন।
    তিনি জানান, আজিজুর রহমান এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত। সরাসরি বহিষ্কার করলে তিনি স্কুলে না এলেও বাসায় বসে বেতন পাবেন।

    এ বক্তব্য আরও ক্ষোভ উসকে দেয়। প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বলেন—“একজন প্রমাণিত যৌন হয়রানিকারক শিক্ষক যখন শ্রেণিকক্ষে থাকেন, তখন ছাত্রীদের নিরাপত্তা কোথায়?

    চলতি বছরের অক্টোবরের শুরুতে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের একটি টিকটক ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে দেখা যায় শিক্ষক আজিজুর রহমান শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত অবস্থায় শিক্ষার্থীরা ভিডিও তৈরি করছে।

    সহকারী শিক্ষক জহির রায়হান দাবি করেন, ভিডিওটি স্কুল বন্ধ থাকাকালীন সময়ে ধারণ করা। কিন্তু প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা পাল্টা বলেন, ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যায়—বই খোলা, খাতা ও কলম নিয়ে ক্লাস চলছে, যা প্রমাণ করে ক্লাস চলাকালীনই ভিডিও ধারণ হয়েছিল।
    এর ফলে বিদ্যালয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও দায়িত্বহীনতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

    স্থানীয় এক অভিভাবক বলেন,
    শিক্ষক যদি ছাত্রীদের হয়রানি করে, তাহলে আমাদের সন্তানরা কার কাছে নিরাপদ?

    অন্য এক স্থানীয় বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
    শিক্ষক সমাজের আদর্শ মানুষ। কিন্তু যখন সেই শিক্ষকই অপরাধী হন, তখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আর ভরসা থাকে না।

    প্রধান শিক্ষক অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করলেও এখনও পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
    বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, “ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভুক্তভোগীরা চাইলে সরাসরি লিখিত অভিযোগ আমার কাছে দিতে পারেন।

    কিন্তু স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে—অভিযুক্ত শিক্ষক আজিজুর রহমান এখনও বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিত থেকে শ্রেণি নিচ্ছেন।

    বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই নিষ্ক্রিয়তা ও দুর্বল অবস্থান শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।
    স্থানীয় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা দাবি করছেন—
    দোষী প্রমাণিত শিক্ষককে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে এবং বিদ্যালয়কে যৌন হয়রানিমুক্ত নিরাপদ শিক্ষাঙ্গনে পরিণত করতে হবে।

    উপরের নিউজটি মাঠ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে করা এ বিষয়ে কোন দ্বিমত থাকলে প্রমাণসহ dailyswadhinshomoy@gmail.com এ ইমেইল করে আমাদেরকে জানান অথবা আমাদের +88 01407028129 নাম্বারে হোয়াটসঅ্যাপ করুন।
    আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
    এই বিভাগের আরও খবর
     
    Jugantor Logo
    ফজর ৫:০৫
    জোহর ১১:৪৬
    আসর ৪:০৮
    মাগরিব ৫:১১
    ইশা ৬:২৬
    সূর্যাস্ত: ৫:১১ সূর্যোদয় : ৬:২১

    আর্কাইভ

    October 2025
    S M T W T F S
     1234
    567891011
    12131415161718
    19202122232425
    262728293031