মোঃ কামরুল ইসলাম রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি:
বিদেশে ভালো চাকরি দেওয়ার নাম করে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি মানব পাচার চক্র। চক্রের খপ্পরে পড়ে বিদেশে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন এক ভুক্তভোগী। এ বিষয়ে মোকাম বিজ্ঞ রায়গঞ্জ থানা আমলী আদালত সিরাজগঞ্জে একটি মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগী এনামুল হক। যাহার মামলা নম্বর-পিটি-১৫০/২৫ রায়, তারিখ: ২৮.০৪.২০২৫ইং।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার সরাইদহ গ্রামের বেল্লাল হোসেনের পুত্র এনামুল হককে কম খরচে বিদেশে পাঠানোর প্রলোভন দেয় সক্রিয় মানব পাচার চক্রটি। তাকে বিদেশে ৫০ হাজার টাকা মাসিক বেতনে চাকরি দেওয়ার কথা বলে তারা।
এদিকে প্রতারক চক্রের আশ্বাসে সরল বিশ্বাসে এনামুল হক সহায়-সম্পদ বিক্রি করে ২০২৩ সালের ২১ নভেম্বর থেকে শুরু করে ২০২৫ সালের ২৭ আগষ্ট পর্যন্ত মানব পাচার চক্রের সদস্য একই উপজেলার খোকসা হাট গ্রামের আব্দুল আজিজের পুত্র মোতালেবকে নগদ ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেন।
প্রতারণার শিকার এনামুল হকের বাবা বেল্লাল হোসেন বলেন, গত ২০ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে মানব পাচার চক্রের সদস্য মোতালেব জানায় এনামুল হকের ভিসা এসেছে। কিন্তু প্রথমে আমাদের কে ভিসা দেখানো হয়নি। আমার ছেলে এনামুল হককে সৌদি আরব যাওয়ার জন্য ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ইং তারিখে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঢুকে দিয়ে চলে যায় মানব পাচার চক্রের সদস্য মোতালেব। সৌদি আরব যাওয়ার পর কাজ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে আবারো ১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। পরবর্তীতে ভূয়া ভিসা দেয়ার কারণে আমার ছেলেকে সৌদি পুলিশ গ্রেফতার করে। পুলিশের সাজা শেষে আমার ছেলে গত ০৫ আগষ্ট ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশে ফেরত আসে।
ভুক্তভোগি এনামুল হক জানন, সৌদি আরবে মোতালেবের আস্তানায় গিয়ে বুঝতে পারি আমরা চক্রের প্রতারণার শিকার হয়েছি। সেখানে আমাদের মতো অনেক বাংলাদেশিকে থাকতে দেখি। তারাও আমাদের মতো প্রতারণার শিকার হয়ে কাজের জন্য অপেক্ষা করছেন। এক পর্যায়ে পাসপোর্ট ফেরত চাইলে আমাদের মারধর ও নির্যাতন করা হয়। এভাবে ২৫ দিন কেটে যাওয়ার পর দেশে যোগাযোগ করি।
তিনি আরো বলেন, মোতালেবের নেতৃত্বে সারা দেশে মানব পাচারের চক্রটির শাখা-প্রশাখা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে রয়েছে। তাদের নিয়ে গিয়ে বিদেশে চাকরি দেবেন বলে দুজনের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর প্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে। তবে তারা সৌদি আরবে পৌঁছে জানতে পারেন তাদের পাঠানো হয় ভ্রমণ ভিসায়। এই ভিসায় বিদেশে গিয়ে কোনো কাজ পাওয়া সম্ভব নয়।
এনামুল হক আরও বলেন, সহায়-সম্পদ বিক্রি করে ৯ লাখ টাকা পাচার চক্রের হাতে দিয়ে আমরা প্রতারিত হয়েছি। আমরা এখন নিঃস্ব। ঘরে খাওয়ারও কিছু নেই। এই অবস্থায় নিরুপায় হয়ে কোর্টে অভিযোগ করেছি। পুলিশ এখন পর্যন্ত প্রতারকদের বিরুদ্ধে কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
অন্যদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ, আব্দুল আজিজ, তার স্ত্রী, তার ছেলে এনামুল হক এরা সবাই সংঘবদ্ধ মানব পাচার চক্রের সদস্য। তারা এভাবেই সরল-সহজ মানুষকে বিদেশে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা করে আসছে। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রায়গঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কেএম মাসুদ রানা বলেন, প্রতারণার শিকার এনামুল হক কোর্টে একটি মামলা করেছেন। মামলাটি থানার একজন অফিসার তদন্ত করছেন। দ্রুতই প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য মোতালেব ও আব্দুল আজিজের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের দুজনের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

