গত সপ্তাহে মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন আয়োজিত প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্কে হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর থেকেই জো বাইডেনকে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান উঠেছে। তবে বাইডেনের পরিবারের পক্ষ থেকে এলো ভিন্ন বার্তা। বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্টের পরিবার চান, বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াই থেকে সরে না আসুক। আজ সোমবার গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
সোমবার ক্যাম্প ডেভিডে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগ দেন বাইডেন। সেখানে নানা আলোচনার মধ্যে বাইডেনের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েও কথা উঠেছে। গতকালের পারিবারিক বৈঠকে ছিলেন বাইডেনের স্ত্রী, সন্তান এবং নাতিনাতনিরা।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের বরাত দিয়ে গার্ডিয়ান বলছে, বৈঠকে পরিবারের সদস্যরা বাইডেনকে বলেছেন, তিনি আরও চার বছর আমেরিকানদের সেবা দিতে পারবেন।
গত সপ্তাহের বিতর্কে পররাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি, সীমান্ত ইস্যু, সামাজিক নিরাপত্তা, চাইল্ড কেয়ার, কংগ্রেস ভবনে হামলার ঘটনা এবং গর্ভপাতসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলার সময় বাইডেন ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একে অন্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা বলার অভিযোগ আনেন এবং পরস্পরকে তীব্র বাক্যবাণে জর্জরিত করার চেষ্টা করেছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প অর্থনীতি সামলানো, পররাষ্ট্রনীতির রেকর্ড ও ব্যাপক সংখ্যক অভিবাসীর বিষয়ে বাইডেনের তীব্র সমালোচনা করেন। অন্যদিকে, আদালতে সম্প্রতি ট্রাম্পের সাজার প্রসঙ্গ তুলে তাকে ‘গণতন্ত্রের জন্য হুমকি’ বলে উল্লেখ করেন বাইডেন।
বিতর্কে ট্রাম্প শেষ করেছেন এই বলে যে আমেরিকার মানুষ এখন জাহান্নামে বাস করছে। “সাড়ে তিন বছর ধরে আমরা জাহান্নামে বাস করছি”।
অন্যদিকে, শেষ বক্তব্যে বাইডেন আমেরিকানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেন এবং বলেন, তিনি কর কমিয়ে আনতে চান। একই সাথে দাবি করেন যে ট্রাম্প কর বাড়িয়ে দিবেন।
জো বাইডেন পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আক্রমণ করেন। এর আগে ট্রাম্প সম্প্রতি জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেনের বন্দুক আইনে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিষয়টি তুলেছিলেন।
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর গত বৃহস্পতিবার প্রথমবার ডেমোক্র্যাট দলের বাইডেন ও রিপাবলিকান ট্রাম্প পরস্পরের মুখোমুখি হন।
সিএনএনের জরিপে বলা হয়েছে, অধিকাংশ দর্শক এই মত দিয়েছেন যে জো বাইডেনের সঙ্গে বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হয়েছেন। সিএনএনের তাৎক্ষণিক জরিপ অনুযায়ী, বিতর্ক দেখেছেন এমন নিবন্ধিত ভোটারদের মধ্যে ৬৭ শতাংশ বলেছেন, ট্রাম্প ভালো করেছেন। আর মাত্র ৩৩ শতাংশ বাইডেনের পক্ষে মত দিয়েছেন।
তবে সিএনএন বলছে, জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা দেশটির সব ভোটারদের মতামতের প্রতিনিধিত্ব করেন না। যারা বিতর্কটি দেখেছেন, আর এই জরিপে অংশ নিয়েছেন, শুধু তাদের মতামতই এই ফলাফলে প্রতিফলিত হয়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া ভোটারদের মধ্যে রিপাবলিকপন্থীদের সংখ্যা কিছুটা বেশি থাকতে পারে।
বিতর্কটি যারা দেখেছেন, জরিপে অংশ নেওয়া এমন ভোটারদের মধ্যে প্রায় ৫৭ শতাংশ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দেওয়ার সক্ষমতার প্রশ্নে বাইডেনের ওপর তাদের আস্থা নেই।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিবিসির স্পেশাল করেসপন্ডেন্ড কেইটি কে লিখেছেন যে এবারের বিতর্কের ফরম্যাট ছিল আমেরিকানদের জন্য তুলনামূলক ভালো। তবে সঞ্চালকরা তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের চেষ্টা করেননি এবং এটা ছিল জো বাইডেনের জন্য একটি খারাপ রাত। তার অনেক জবাবই পরিষ্কার ছিল না। তাকে বয়স্ক মনে হচ্ছিল।
তবে বিতর্কের দ্বিতীয় ধাপ তার জন্য কিছুটা ভালো ছিল এবং তিনি কিছুটা শক্তি পেয়েছিলেন। তবে এটি হতে হতে অনেক দেরি হয়ে গেছে। বিতর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতেছেন।
বিতর্কে এমন পারফরম্যান্সের পরেই বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াই থেকে সরে আসার আহ্বান জোরালো হয়।