মো ওমর খান সানি , তাড়াইল (কিশোরগঞ্জ) উপজেলা প্রতিনিধি:
কিশোরগঞ্জের তাড়াইল মুক্তিযোদ্ধা সরকারি কলেজের ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের একাদশ শ্রেণির (এইচএসসি) শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন ক্লাস শুরু হয়েছে। এবারের স্লোগান ছিল ‘এসো হেসে হেসে পুষ্পিত রথে, এসো ভালোবেসে স্বপ্নের পথে’ পঙক্তিদ্বয়ের আমন্ত্রণ ধারণ করে নবীন শিক্ষার্থীদের জন্য নিবেদিত হলো ‘হ্যাপি ওরিয়েন্টেশন ২০২৫’।
সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০ টায় তাড়াইল মুক্তিযোদ্ধা সরকারি কলেজ প্রাঙ্গনে প্রাণবন্ত আয়োজন আর অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্যে-সাংস্কৃতিক আবহের মধ্য দিয়ে নবীনদের বরণ করে নিল কলেজের শিক্ষক ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা।
পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এদিন নবীনদের শুভেচ্ছা ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। পুরো প্রাঙ্গণ সাজানো ছিল বেলুন, পোস্টার ও ব্যানারে। নবীনদের মুখে উচ্ছ্বাস আর শিক্ষকদের মুখে গর্ব-দুটি মিলে তৈরি হয় এক অপূর্ব মিলনমেলা। এই নবীনবরণ কেবল একটি অনুষ্ঠান নয়, বরং এক নতুন যাত্রা যেখানে জ্ঞানের আলো, নৈতিকতার শুদ্ধতা আর স্বপ্নের নক্ষত্রপুঞ্জ মিলে গড়ে উঠবে আগামী দিনের বাংলাদেশ।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পপি খাতুন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, তাড়াইল থানা (ভারপ্রাপ্ত) পুলিশ কর্মকর্তা সাব্বির রহমান।
নবীনদের উদ্দেশে উষ্ণ স্বাগত বক্তব্য রাখেন,
তাড়াইল মুক্তিযোদ্ধা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ
(ভারপ্রাপ্ত) রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, নতুন শিক্ষার্থীরা এই প্রতিষ্ঠানের প্রাণ। তোমাদের সাফল্যেই আমাদের গৌরব। শিক্ষার্থীদের সকল হীনমন্যতা কাটিয়ে উঠতে ও জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমার সন্তানদের যেভাবে দেখি, আমার কলেজের প্রতিটি শিক্ষার্থীদেরও তেমনি দেখব। ওরিয়েন্টেশনে নবীন শিক্ষার্থীদের কলেজের বিভিন্ন ক্লাব কার্যক্রম ও কো-কারিকুলার সুযোগ সম্পর্কে জানানো হয়। স্পোর্টস ক্লাবসহ নানা ক্লাবে অংশগ্রহণের গুরুত্বও তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পপি খাতুন বলেন, আমাদের প্রতিটি শিক্ষার্থীই একটি আলোর দিশারি। তারা শুধু পরীক্ষার ফলাফলের জন্য নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের জন্য প্রস্তুত হবে।
তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আরও বলেন, শিক্ষা কেবল বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং জীবনকে জানার, গড়ার এবং সমাজকে আলোকিত করার সর্বোত্তম মাধ্যম। তোমাদের প্রত্যেককে এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। মোবাইল জ্ঞানের আলো দিতে পারে, কিন্তু অযথা ব্যবহারে তা অন্ধকারের কারণ হয়। শিক্ষার সময় মোবাইল যতটা হাতের বাইরে থাকবে, মনোযোগ ততটাই বইয়ের ভেতরে থাকবে। সোশ্যাল মিডিয়ার মোহে আটকে গেলে মেধা হারায় তীক্ষ্ণতা, আর স্বপ্ন হারায় গতি। তাই মোবাইলকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে মোবাইল যেন আমাদের নিয়ন্ত্রণ না করে। ডিজিটাল দুনিয়া যদি আসক্তির ফাঁদে ফেলে, তবে বই-কলমই হয়ে উঠবে মুক্তির রাস্তা। তিনি বলেন, এই কলেজ শুধু পড়াশোনার জায়গা নয়, এটি নৈতিকতা, নেতৃত্ব ও মানবিকতার স্কুল। আমরা চাই তোমরা একদিন দেশ-বিদেশে আলোকবর্তিকা হয়ে ওঠো। এখানে শুধু পাঠ্যবইয়ের জ্ঞান নয়, শেখানো হয় মানবিকতা, দায়িত্ববোধ, নেতৃত্ব আর দেশপ্রেম। এখানকার প্রতিটি শিক্ষক শিক্ষার্থীর অভিভাবকের মতো, আর প্রতিটি শিক্ষার্থী আমাদের আলোকবর্তিকা। অন্য প্রতিষ্ঠান যেখানে কেবল ফলাফলের দিকে দৃষ্টি দেয়, আমরা সেখানে গড়ে তুলি পূর্ণাঙ্গ মানুষ। আমাদের শিক্ষার্থীরা শুধু পরীক্ষায় ভালো করবে না, তারা জীবনের পরীক্ষায় ও ভালো করবে। এখানকার শৃঙ্খলা, নিয়মকানুন, ক্লাব কার্যক্রম, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা—সবকিছু মিলিয়ে তোমাদের জীবনকে করে তুলবে বহুমাত্রিক ও সমৃদ্ধ। তাড়াইল মুক্তিযোদ্ধা সরকারি কলেজ
ব্যতিক্রম। কারণ আমরা শুধু ‘শিক্ষার্থী’ তৈরি করি না, আমরা তৈরি করি আগামী দিনের আলোকিত নাগরিক।

