নুর মোহাম্মদ কাকাঃ
ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। এর সংরক্ষণে প্রতিবছর সরকার নির্দিষ্ট সময়ে মা ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে থাকে। সেই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরও মা ইলিশ রক্ষায় আগামী ২২ দিন নদ-নদীতে মাছ ধরা, পরিবহন, মজুত ও বিপণনে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। শুক্রবার (৪ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া এ নিষেধাজ্ঞা চলবে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত।
প্রশাসন জানিয়েছে, মা ইলিশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে পদ্মা-মেঘনাসহ গুরুত্বপূর্ণ নদ-নদীতে নৌপুলিশ, মৎস্য বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন ও কোস্টগার্ড যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করবে। নজরদারি জোরদার করতে এবার নতুন কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—ড্রোন ব্যবহার, নৌপথে রাতভর টহল বৃদ্ধি, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান এবং জেলেদের সচেতন করতে নদীপাড়ে প্রচারণা কার্যক্রম।
তবে মাঠপর্যায়ে এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিভিন্ন এলাকায় অভিযোগ রয়েছে, নৌপুলিশ ও নদীভিত্তিক থানার সঙ্গে জড়িত কিছু প্রভাবশালী দালাল চক্র প্রশাসনের উদ্যোগকে অকার্যকর করে দিচ্ছে। তারা গোপনে জেলেদের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ ধরায় সহায়তা করছে। ফলে সরকার ঘোষিত সুরক্ষা অভিযান যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে না।
স্থানীয় জেলেরা অভিযোগ করে বলেন, প্রকৃত জেলেরা নদীতে নামতে না পারলেও দালাল চক্রের ছত্রছায়ায় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি অবাধে মা ইলিশ নিধন করছে। এতে একদিকে প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে, অন্যদিকে ইলিশের প্রজনন ও উৎপাদন হুমকির মুখে পড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইলিশের টেকসই উৎপাদন নিশ্চিত করতে হলে কেবল নিষেধাজ্ঞা দিলেই হবে না, বরং দালাল চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি বিকল্প কর্মসংস্থান ও জেলেদের পুনর্বাসন না করলে এ ধরনের উদ্যোগ সফল হবে না।
মা ইলিশ দেশের সম্পদ। এ সম্পদ রক্ষায় প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ, দালাল চক্র দমন এবং জেলেদের সহযোগিতা ছাড়া কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। এখন সময় এসেছে কঠোর নজরদারি ও দায়মুক্তিহীন কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে মা ইলিশ সংরক্ষণকে সফল করার।

