প্রিয় জাকিয়া,
আজ অনেক দিন হলো তোমার কোনো খবর নেই। প্রায় নয় মাস পেরিয়ে গেছে, তুমি ফোন করোনি, আমিও অভিমানে ফোন করিনি। কিন্তু বিশ্বাস করো, প্রতিদিন সকালবেলা দোকান খোলার সময় থেকে রাতের নিস্তব্ধ মুহূর্ত পর্যন্ত তোমার কথা মনে পড়ে।
জানিস, আমি এখনও মনে করতে পারি সেই দিনগুলো—যখন পাশাপাশি আমাদের দোকান ছিল। সারাদিন একসাথে হিসাব করতাম, কখনো লাভে হাসতাম, আবার কখনো ক্ষতিতে মাথা নিচু করে বসে থাকতাম। তুই ভুল করলে আমি বলতাম,
“এই শোন, তুই আবার গণ্ডগোল করলি!”
আর তুই মাথা নিচু করে মিষ্টি করে বলতে—
“আপনি ঠিকই ধরেছেন, আমার ভুল ছিল।”
এই “আপনি” আর “তুই”-এর টানটাই আমাদের সম্পর্কের আসল সৌন্দর্য ছিল।
—
জাকিয়া, মনে আছে? কতবার আমরা মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছি। কখনো ক্লান্ত শরীরে রাতে দোকান বন্ধ করে রাস্তায় বাতাস খেয়েছি, কখনো দূরে কোথাও গিয়ে দু’কাপ চা খেয়ে ফিরেছি। রাস্তায় চলার সময় তুই হেলমেট খুলে বলতিস—
“আপনি না থাকলে আমি কোথাও আসতাম না।”
আর আমি হেসে উত্তর দিতাম—
“ধুর বোকা, আমি না থাকলে তুই রাস্তাই চিনবি না।”
সেই মুহূর্তগুলো এখন শুধু স্মৃতির অ্যালবামে বন্দী।
—
কিন্তু তারপর হঠাৎই তুই সাইপ্রাস চলে গেলি। আমাকে কিছু না বলে। দশ দিন পর ফোন করে জানালি। সেদিন ফোন রেখে আমি যে কেঁদেছিলাম, তা তুই জানিস না।
তুই বললি,
“আপনি রাগ করবেন না, আমি সুযোগ হারাতে চাইনি।”
আর আমি শুধু বলেছিলাম—
“তুই আমাকে না বলে গেলি, এত বছরের সম্পর্কটা কি এতোই হালকা ছিল?”
—
আজও আমি সেই প্রশ্নের উত্তর পাইনি।
তবে একটা জিনিস জানি—জাকিয়া, আমি যতই অভিমান করি না কেন, তুই আমার জীবনের এক অমূল্য অংশ।
তুই হয়তো বিদেশে কষ্ট করছিস, হয়তো আবার লোনের বোঝা, ব্যবসার চিন্তা তোর মাথায় ঘুরছে। কিন্তু জানিস? আমি সবসময় তোর পাশে আছি—অন্তত মনের ভেতর।
—
জাকিয়া, যদি তুই এই চিঠিটা পড়িস, আমি শুধু একটা কথাই চাই—আমাদের সম্পর্কটা যেন অভিমানের দেয়ালে আটকে না থাকে। তুই হয়তো অনেক দূরে, কিন্তু তোর “আপনি” ডাকটা এখনও আমার কানে বাজে।
একদিন হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠুক—
তুই বলিস,
“আপনি কেমন আছেন?”
আর আমি চোখ ভিজিয়ে বলব,
“ধুর পাগলি, তুই না এলে আমি তো বেঁচেই থাকতে পারি না।”
তুই ফিরে আয় জাকিয়া—হয় বন্ধুর মতো, নয়তো সেই আগের দিনের সাথী হয়ে।
শুধু অভিমান যেন আমাদের হাসির স্মৃতিগুলোকে হারিয়ে না ফেলে।
চিরস্মরণীয়
—তোর বাবু

