বরিশাল ব্যুরোঃ
মাদক নামের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে যেখানে অসংখ্য পরিবার দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করছে, সেখানে আশার প্রদীপ হয়ে উঠেছে বরিশালের দি নিউ লাইফ মাদকাসক্তি ও মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্র। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে এখন এটি একমাত্র নির্ভরযোগ্য ভরসাস্থল। গত ছয় বছরে এখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ জীবনে ফিরেছেন দেড় হাজারেরও বেশি রোগী।
নিউ লাইফের বিশেষত্ব হলো—এখানে কেবল ওষুধ নয়, রোগীদের দেওয়া হয় মানসিক পরামর্শ, সাইকোথেরাপি, পারিবারিক কাউন্সেলিং ও শিক্ষামূলক ক্লাস। ফলে রোগীরা সহজেই স্বাভাবিক জীবনে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন।
আধুনিক অবকাঠামো, নিবিড় পরিচর্যা ও সেবামূলক মনোভাব কেন্দ্রটিকে করেছে ব্যতিক্রমী। এখানে রয়েছে পৃথক বিছানা, মানসম্মত খাবার, বিনোদন সুবিধা, সার্বক্ষণিক নজরদারির জন্য ৬৪টি সিসি ক্যামেরা, সুসজ্জিত বাগান ও বৃহৎ হলরুম। পাশাপাশি অভিজ্ঞ সাইকিয়াট্রিস্ট, সাইকোলজিস্ট, এমবিবিএস চিকিৎসক, নার্স, ধর্মীয় শিক্ষক এবং প্রশিক্ষিত স্টাফরা সবসময় রোগীদের পাশে থাকেন।
প্রতিষ্ঠানটির আবাসিক চিকিৎসক মুফতি আল মুহিত বলেন, “একজন আসক্তকে সঠিক সময়ে চিকিৎসার আওতায় আনতে পারলে শুধু একটি পরিবারই নয়, পুরো সমাজ উপকৃত হয়। এখানে আসা প্রত্যেক রোগী সুস্থ হয়ে আবার নতুন জীবন শুরু করছে।”
বরিশাল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপপরিচালক পরিতোষ কুমার কুন্ডু বলেন, “দি নিউ লাইফ অনুমোদিত ও আধুনিক মানের একটি নিরাময় কেন্দ্র। দেশের যেকোনো কেন্দ্রের তুলনায় এর চিকিৎসা বেশি বিজ্ঞানসম্মত ও কার্যকর।”
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মর্তুজা জানান, “আমরা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে এ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছি। তরুণ ও যুব সমাজকে মাদকের ভয়াল ছোবল থেকে রক্ষা করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। এখানে ভর্তি হওয়া প্রত্যেক রোগীই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন—এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় সাফল্য।”
রোগী ও স্বজনদের অভিমত—যেখানে অনেক নিরাময় কেন্দ্রে অপচিকিৎসার অভিযোগ রয়েছে, সেখানে নিউ লাইফে মানবিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। ফলে সুস্থ হয়ে রোগীরা সহজেই সমাজে ফিরে যাচ্ছেন।
তবে সম্প্রতি কিছু অনলাইন পোর্টালে দি নিউ লাইফকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ ও রোগীদের পরিবার। তাদের অভিযোগ—ভিত্তিহীন এসব সংবাদ দিয়ে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে এবং নিরাময় কার্যক্রমের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট করার চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বরিশাল জেলা প্রশাসকের নিকট বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। তাদের দাবি, অপপ্রচারের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মর্তুজা বলেন, “আমরা সবসময় আইন ও সরকারের নির্দেশনা মেনে পরিচালনা করছি। প্রশাসনের প্রতি আমাদের আহ্বান—ভুয়া ও উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা যেন অবিলম্বে বন্ধ করা হয়।”
নিউ লাইফ আজ শুধু একটি চিকিৎসাকেন্দ্র নয়—এটি হয়ে উঠেছে মাদকমুক্ত জীবনের স্বপ্ন কারখানা। অসংখ্য পরিবারে ফিরিয়ে দিচ্ছে নতুন জীবন ও নতুন আশা

